জলচক্র কাকে বলে in bengali / জলচক্র ( HYDROLOGICAL CYCLE )

জলচক্র কাকে বলে in bengali  / জলচক্র  (  HYDROLOGICAL CYCLE )



     জলচক্র     

     HYDROLOGICAL CYCLE     


 বারিমণ্ডল ( Hydrosphere ) হল পৃথিবীর ভূ - পৃষ্ঠস্থ ও ভূ - অভ্যন্তরীণ যাবতীয় জলের ভৌগােলিক নাম এর বিস্তার বায়ুমণ্ডলে ( Atmosphere ) ১৫ কিমি এবং শিলামণ্ডলে ( Lithosphere ) ১ কিমি নিম্ন পর্যন্ত । জলশাস্ত্রের কেন্দ্রিয় ও মূল বিষয় হল ‘ জলচক্র ' ( hydrological cycle )


 জলচক্রের বৈশিষ্ট্য  ( Main Characteristics of Hydrological Cyele ) : 


জলচক্র সম্বন্ধে সঠিকভাবে অনলাভ করতে হলে জচক্রের নিম্মোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি জানা একান্ত প্রয়ােজনীয় ; 

 ( ১ ) পৃথিবীতে জলচক্র একাধিক ও অবিনশ্বর । 

( ২ ) স্থান - কাল ও জলের রূপভেদের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই চক্রের পরিবর্তন ঘটে থাকে । 

( ৩ ) জলচক্রের উপর অক্ষাংশ , সৌরশক্তির পরিমাণ , মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা , ভূ - তাত্ত্বিক ও ভূ-প্রাকৃতিক প্রভাব প্রভৃতি ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় । 

( ৪ ) জলচক্রের সঙ্গে বাষ্পীভবন ও অধঃক্ষেপণ এই দুটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিশেষভাবে যুক্ত । 

( ৫ ) মেরু বা মরু অঞ্চলের তুলনায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলচক্র স্পষ্ট ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে । 

( ৬ ) জলচক্রের সাহায্যে কোন দেশের বা মহাদেশের জলের আয় ব্যয়( Hydrological Budget ) বােঝা বা জানা যায় । 

( ৭ ) বিভিন্ন প্রকার জলচক্ৰতথ্য , বৃষ্টিপাত , জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য , ভৌমজল সংক্রান্ত তথ্য , বাষ্পীভবন , বাষ্পমােচন প্রভৃতি এই জলচক্রের দ্বারা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা সম্ভবপর হয় ।


    জলচক্রের  উপাদান সমূহ    

    ( Elements of hydrological cycle )  

জলচক্রের বিভিন্ন উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল -

 ( ১ ) বাষ্পীভবন ( Evaporation ) 

              ( ২ ) ঘনীভবন ( Condensation ) কনড্রোন 

( 3 ) অধঃক্ষেপণ ( Precipitation )

     ( 8 ) রােধন / প্রবেশ্য ( Interception )

( ৫ ) শােষণ ( Absorption )

                              ( ৬ ) বাষ্পীয় - প্রস্বেদন ( Evapo - transperation )

( ৭ ) অনুপ্রবেশ ( Infiltration )

  ( ৮ ) অনুস্রাবন ( Percolation )

    ( ৯ ) ভৌমজল ( Ground water )

নিম্নে এদের বিস্তারিত আলােচনা করা হল 


( ১ ) বাষ্পীভবন ( Evaporation ) : -

পুজােরান জলচক্রের শুরু বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া দ্বারা । সৌররশ্মির তাপীয় ফলের প্রভাবে সাগর , মহাসাগর , নদী , খাল , বিল , জলাশয়ের জল বাষ্পীভূত হয়ে । বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত হয় । যে প্রক্রিয়ায় জল বাষ্পে পরিণত হয় , তাকে প্রস্বেদন ( আউটপুট ) অধঃক্ষেপণ বাষ্পীভবন ( আউটপুট ) ( ইনপুট ) বাষ্পীভবন ( Evaporation ) বলা । হয় । শীতের দিনের তুলনায় গ্রীষ্মের নদীখাতে জলের প্রবাহ দিনে তাপমাত্রা অধিক থাকার ফলে জলধারাপ্রবাহ বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হয় এবং উদ্ভূত জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত মাটির মধ্যে অবস্থায় অবস্থান করে । জলীয়বাষ্প জলের প্রবাহ বায়ুর অন্যান্য উপাদানের তুলনায় হাল্কা বলে তা দ্রুত উৰ্দ্ধ বায়ুমণ্ডলে উখিত হয়   


( 2 ) ঘনীভবন ( Condensation ) : 


 জলীয়বাষ্পের জলকণা যত সূক্ষ্ম হবে বাষ্পীয় চাপ তত বেশি হবে । ফলে বিশুদ্ধ জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হবার আগেই আবার বাস্পীভূত হয় । এই কারণে বিশুদ্ধ জলীয়বাষ্পের তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলেও সাধারণতঃ কোনাে ঘনীভবন হয় না , বায়ু কেবলমাত্র পরিপৃক্ত অবস্থায় থাকে । অপরদিকে প্রচুর পরিমানে ঘনীভবন কেন্দ্ৰক থাকলে দ্রুত ঘনীভবন ঘটে এবং কম বারিবিন্দুতে পরিণত হয় । ঘনীভবন প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে 

( i ) বায়ু শীতল হলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় ।

 ( ii ) জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধুলিকণাকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয় ।

 ( iii ) বায়ুমণ্ডলীয় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫ শতাংশ না হওয়া পর্যন্ত জলকণার বৃদ্ধি চলতে থাকে ।

 ( iv ) জলকণা যতই বড় হােক না কেন তার ফলে ঘনীভবন কমতে থাকে , তাই জলকণা বড় হওয়ার জন্যেই সময় বেশি লাগে । 

( v ) জলকণা সৃষ্টির পর ঘনীভবন কেন্দ্রগুলির চতুর্দিকে জলকণা দ্রুত সংযােজিত হয়ে এদের আকৃতি বড় হতে থাকে ।

 ( vi ) সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণাগুলি নিজেদের মধ্যে আকর্ষণজনিত বলের প্রভাবে বড় জলকণাতে পরিণত হয় এবং পরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টিকণারূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে । ( 3 ) অধঃক্ষেপণ ( Precipitation )


 বায়ুমণ্ডলের ঘনীভূত জলীয়বাষ্প কঠিন অথবা তরলে পরিণত হলে যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ পৃষ্ঠে পতিত হয় , তখন তাকে অধঃক্ষেপণ বলে । অবশ্য বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প কুয়াশা , শিশির , তুহিন প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের অন্তর্গত নয় । এই কারণে বৃষ্টিপাত , গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি , তুষারপাত , শিলাবৃষ্টি এবং এদের বিভিন্ন রূপ অধঃক্ষেপণ হিসাবে গণ্য করা যায় না । যা সংক্ষেপে ppt নামে পরিচিত । এই ppt- এর মান , সময়কাল , তীব্রতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরিমাপ করা যায় । 


( ৪ )  রােধন / প্রবশ ( Interception ) : 


নেটারফোন বর্ষণের সময় বৃষ্টিপাতের সম্পূর্ণটাই সরাসরি পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায় না । কারণ এর বেশ কিছু অংশ সবুজ উদ্ভিদ , বায়ুমণ্ডল ও সূর্যের তাপে সরাসরি বাষ্পীভবন ঘটে । ফলে মােট অধঃক্ষেপণের বেশ কিছুটা কম অংশ ভূ - পৃষ্ঠে পতিত হয় । ভূ - পৃষ্ঠে পতিত জলধারা প্রবাহের সময় নানান মাধ্যমের দ্বারা শােষিত হয় বা বাধাপ্রাপ্ত হয় । একে বলা হয় রােধন ( Interception ) । রােধন - এর কিছু পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হলেও অবশিষ্ট কিছু অংশ ভূ - পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় । যা মােট জলের বাহ্যিক অবস্থানকে বৃদ্ধি করে ।

( ৫ ) শােষণ ( Absorption ) :


 বর্ষণের দ্বারা ভূ - পৃষ্ঠের সাথে যে জল সংযােজিত হয় , তার প্রভাবে মৃত্তিকা আর্দ্র হয়ে ওঠে । ভূমিভাগ সম্পৃক্ত হবার পর ভূ - পৃষ্ঠের উপর পতিত জলরাশি হাল্কা একটি জলের আস্তরণের মত ভূ - পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে । একে বলা হয় পৃষ্ঠদেশীয় জলপ্রবাহ ( Surface run - off ) , যা প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে মৃত্তিকার কণার শােষণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে ।


 ( ৬ ) বাষ্পীয় প্রস্বেদন ( Evapo - transperation ) :


 স্বাভাবিক উদ্ভিদ বা অন্য যে কোনাে উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে খনিজ লবণ মিশ্রিত জল মূলরােম দ্বারা গেযেণ করে । সালােকসংশ্লেষের পর অতিরিক্ত জল পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে ত্যাগ করাকে বলে বাষ্পীয় প্রস্বেদন ( Evapo transperation ) । এই বাষ্প বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত বাম্প মিশ্রিত করে এবং বায়ুমণ্ডলীয় আদ্রতাকে বৃদ্ধি করে । তাই ঘন সবুজ উদ্ভিদ বলয় অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় ও জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয় ও বৃষ্টিপাতের পরিমান তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায় । 


( 7 ) অনুপ্রবেশ ( Infiltration ) :


 পৃথিবীর কোনাে একটি অঞ্চলে ভূ - পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত বৃষ্টির জল এবং বরফগলা জলের পরিমানই ভূ - অভ্যন্তরে জলের সঞ্চয়ের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে । যে পদ্ধতিতে মিটিওরিক ( Meteoric ) জল ভূ - অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তা কৈশিক শক্তির দ্বারা জলের অনুপ্রবেশ ( infiltration ) বলে চিহ্নিত হয় । কোনাে একটি অঞ্চলে ভূ - অভ্যন্তরে জলের অনুপ্রবেশ বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল । এগুলি হ’ল- শিলার মধ্যে জলের প্রবেশ্যতা , মৃত্তিকার অভ্যন্তরে বায়ুর সঞ্চালন , বৃষ্টিপাতের মাত্রা , ভূমির নতি , ঋতু পরিবর্তন এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি ইত্যাদি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ভূ - পৃষ্ঠের সংগৃহীত জলের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ।

 ( ৮ ) অনুস্রাবল ( Percolation ) :


 কৈশিক পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে অনুপ্রবেশকারী জল মৃত্তিকাকে আর্দ্র করে । এরপর অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রভাবে তুলনামূলকভাবে নিচের স্তরগুলির দিকে সূক্ষ্ম রন্ধ্রপথ দিয়ে জল প্রবাহিত হয় । অবশ্য এই নিম্নমুখী প্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে , এই প্রবাহকে বলা হয় অনুস্রাবন ( Percolation ) । অনুস্রাবণের সঙ্গে শুষ্ক মৃত্তিকা ধীরে ধীরে আর্দ্র হতে থাকে এবং অনুস্রাবন পদ্ধতিতে মৃত্তিকার অভ্যন্তরস্থ সম্পৃক্ত স্তর থেকে অসম্পৃক্ত স্তরে প্রবাহিত হয় ও এর প্রভাবে মৃত্তিকার আদ্রতাকে আরাে বৃদ্ধি করে । 


( 9 ) ভৌমজল  ( Ground Water ) :


 ভূ - অভ্যন্তরে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের উপরে সঞ্চিত জলকে বলা হয় ভৌমজল ( Ground water ) । প্রাথমিকভাবে বৃষ্টির জল , বরফ ও তুষারগলা জল ও ভূ - পৃষ্ঠের উপরিভাগের মৃত্তিকাস্তরকে আর্দ্র করে । এরপর কিছু জল কৈশিক প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার স্তরের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে অনুপ্রবিষ্ট জল প্রবেশ কণা বিশিষ্ট মৃত্তিকার স্তরকে পরিপৃক্ত করে । এই পদ্ধতিতে অনুপ্রবেশকারী জল ধীরে ধীরে মৃত্তিকার স্তরকে স্থায়ী সম্পৃক্ততার স্তরে পরিণত করে । এই অংশেই ভৌমজলের ভাণ্ডার অবস্থান করতে থাকে ।


 ( ১০ ) ভূ - পৃষ্ঠস্থ জল ( Surface Water ) : 


বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য অধঃক্ষেপণের জল যখন ভূ - পৃষ্ঠের উপর দিয়ে জলধারার আকারে প্রবাহিত হয় , তখন তাকে ভূ - পৃষ্ঠে প্রবাহিত জলধারা ( run - off ) বলে । পৃথিবীতে পতিত মােট জলধারার ২-৩অংশ ভূ পৃষ্ঠের ঢালের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে প্রবাহিত হয় । নদী , নালা , খাল , বিল , হ্রদ ও সমুদ্রের জল হ’ল ভূ পৃষ্ঠস্থ জলের আধার । পৃথিবীর মােট জলের ৯৭ % জল থাকে ভূ - পৃষ্ঠে । বাকী ৩ % জল থাকে পৃথিবীর অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ।


>> বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যস্তর ও বাস্তুসংস্থানিক পিরামিড

>> সুন্দরবনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব লেখ




Post a Comment

0 Comments