SEZ বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ( Special Economic Zone )
SEZ কী ? ( What is SEZ )
SEZ এমন একটি ভৌগোলিক অঞ্চল যার অর্থনৈতিক আইনকানুন দেশের সকল অঞ্চলের অর্থনৈতিক আইনকানুনের চেয়ে অনেক বেশি উদার । এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হল একটি বিশেষভাবে চিহ্নিত এলাকা যা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে এবং ব্যবসা , কর ও শুল্ক ছাড়ের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা পাবে । আয়কর , বিক্রয়কর , পরিষেবা কর , আবগারী শুল্ক ইত্যাদির ব্যাপারে SEZ পাবে বিশেষ ছাড় ও সুবিধা । ২০০৫ সালে SEZ আইন হিসেবে প্রণীত হয় এবং ২০০৬ থেকেই SEZ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ।
SEZ এর উদ্দেশ্যে ( Objectives )
SEZ বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করার উদ্দেশ্য বহুবিধ :
১. মূল উদ্দেশ্য রপ্তানি বৃদ্ধি
2. দেশের GDP ( Gross Domestic Product ) বৃদ্ধি
3. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
8. আন্তর্জাতিক মানের 13 বহুজাতিক শিল্পসংস্থাগুলিকে শিল্প গড়ে তুলতে আকৃষ্ট করা
5. প্রত্যক্ষ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান
৬. আধুনিক ও বৈদেশিক প্রযুক্তি সংগ্রহ ও প্রয়োগ
৭. পরিকাঠামো তৈরীতে উৎসাহ সৃষ্টি
8. দেশজ পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি
9.SEZ- কে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির বাতাবরণ তৈরি করা
১০. উদ্বৃত্ত বাণিজ্য তৈরি করা ( আমাদানির চেয়ে রপ্তানির আয় বেশি হবে । )
>
SEZ গঠনের জন্য বিশেষ সুবিধাসমূহ ( Special Incentives for creation of SEZ ) :
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা সেজ ( SEZ ) গঠনের জন্য যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাগুলি SEZ আইনে বলে পাওয়া যাবে সেগুলি হল :
1. Income Tax Relief : রপ্তানি আয়ের ওপর প্রথম ১০ বছর ১০০ % এবং পরবর্তী ৫ বছর ৫০ % হারে আয়করে ছাড় ।
২. কেন্দ্রীয় বিক্রয় করে ছাড় ( Central Sales Tax Relief ) : কেন্দ্রীয় সরকার আরোপিত বিক্রয় কর সম্পূর্ণ ছাড় ।
৩. অন্তশৃদ্ধ ও বহিঃশুল্ক ছাড় ( Relief on Excise & Custom Duties ) : বোর্ড অব অ্যাপ্রুভাল ( Board of Approval ) অনুমোদন সাপেক্ষে অন্তঃশুল্ক ও বহিঃশুল্কে ছাড় ।
৪. পরিষেবা কর ( Service Tax ) : মকুব ।
৫. মুনাফাজনিত ডিভিডেণ্ড প্রদানের উপর কর ছাড় ।
৬. ঋণ গ্রহণে বিশেষ সুযোগ : ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অনুমোদিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের বিশেষ সুযোগ । বর্তমানে এক কোটি ডলার পর্যন্ত বহিঃবাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণের সুবিধা ।
৭. বিশেষ প্রশাসনিক সুবিধা এক জানালা নীতির ( single window policy ) মাধ্যমে SEZ সংক্রান্ত সমস্যাদির দ্রুত সমাধান ইত্যাদি ।
৮. পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র আবশ্যক নয় ।
৯. স্থানীয় নির্বাচিত প্রশাসনিক ( Local Self Government ) হস্তক্ষেপ মুক্ত অঞ্চল ।
১০. শ্রমসংক্রান্ত অনেক আইনে ( Industrial Disput Act , Central Labour Act , Factory Act , Minimum Wage Act Trade Unions Act , ) বিশেষ সুবিধা বা ছাড় ।
SEZ- এর সংখ্যা :
১৯ টি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিয়েছেন তিন শতাধিক প্রকল্প যার সামগ্রিক এলাকা প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর । আরো দুই শতাধিক সেজ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় । এর মধ্যে ৬৩ টি SEZ গঠনের নির্দেশিকা জারী হয়েছে । ২৩ টি SEZ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে যার মধ্যে ১৮ টি রয়েছে IT ( Information Technology ) সেক্টরে ।
SEZ- এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ ( Main features of SEZ ) :
১. SEZ এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে তিন বছরের মধ্যে রপ্তানি মাধ্যমে বিদেশী মুদ্রা আয় করতে হবে ।
২. SEZ- এ উৎপন্ন দ্রব্য রপ্তানি ভিন্ন দেশীয় বাজারে অংশগ্রহণ করতে গেলে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কর নীতি মেনে চলতে হবে ।
৩. SEZ- এর অন্তর্গত প্রতিষ্ঠানগুলি আয়করের ক্ষেত্রে বিরাট ছাড় পেয়ে থাকে । এই ছাড়ের পরিমাণ প্রথম ১০ বছরে ১০০ % এবং পরবর্তী ৫ বছরে ৫০ % । এটি শিল্পোৎপাদনে বিশেষ উৎসাহ সৃষ্টি করে ।
4. SEZ স্থানীয় নির্বাচিত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত , যেমন এটি পঞ্চায়েতের অধীন নয় ।
৫. অন্তঃ ও বহিঃ শুল্কে ছাড় পায় ।
৬. বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ছাড় থাকে ।
৭. পরিষেবা কর বা সার্ভিস ট্যাক্স ( Service Tax ) লাগে না ।
৮. অভ্যন্তরীণ ব্যাঙ্কিং সুবিধা ও বৈদেশিক ঋণ অথবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদার নীতি ।
৯. পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র লাগে না ।
১০. অর্থনৈতিক কাজকর্ম গড়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় । তবে প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানি বাজার হওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির দিকে শিল্পসংস্থাগুলির ঝোক বেশি । এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছুটা সংকুচিত হয় ।
১১. শ্রম আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেএ SEZ বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে । এখানে শিল্পশ্রমসংক্রান্ত আইন অনেক বেশি নমনীয় হওয়ায় কর্তৃপক্ষের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ বেশি ।
১২. লাল ফিতের ফাস এড়িয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সুবিধা পেতে দেরি হয় না ।
১৩. SEZ- এর অন্তর্গত জমি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতে হবে , লীজ দেওয়া বা বিক্রি করা নিয়মবহির্ভূত ।
১৪. SEZ- এর জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত ।
0 Comments