উপজাতির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

 উপজাতির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য 

    উপজাতির সংজ্ঞা   

সংজ্ঞা 1 : - উপজাতি হল সমাজের এমন একটি গোষ্ঠী যাদের জীবনে জটিলতা নেই । তারা এখনও একই ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করেন , যাঁদের আকৃতি বা সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য আছে , নিজেদের নিয়মকানুন রক্ষার জন্য পঞ্চায়েত আছে এবং প্রয়োজন হলে তাঁরা গোষ্ঠী সচেতন মনোবৃত্তি নিয়ে যুদ্ধ বিগ্রহ বা সংগ্রাম করে থাকে ।

সংজ্ঞা  2 : - উপজাতি হল কয়েকটি পরিবারের সমষ্টি অথবা এক গোষ্ঠীর পরিবার , যাঁদের নামে সমতা থাকে , যাঁরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করেন , একই ভাষায় কথা বলেন এবং বিবাহভিত্তিক ও পেশাভিত্তিক ধর্মীয় বাধা নিষেধ মেনে চলেন ।

উপজাতির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য,উপজাতির সংজ্ঞা,উপজাতির বৈশিষ্ট্য,ভারতের উপজাতির শ্রেণীবিভাগ,উপজাতি কাকে বলে, আদিবাসী কাকে বলে, উপজাতি তালিকা,

   উপজাতির বৈশিষ্ট্য      

( i ) সাধারণ বাসস্থান : সাধারণত উপজাতিরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করেন । অবশ্য সব উপজাতিহ যে একই জায়গায় বসবাস করবেন এমন কোনও নিদর্শন পাওয়া যায় না , কেননা যে সব উপজাতি যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ান তাদের স্থানের পরিবর্তন অতি সাধারণ ব্যাপার ।

( ii ) একতাবদ্ধতা : উপজাতিদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল পরস্পরের মধ্যে একতাবদ্ধতা । 

( iii ) সাধারণ ভাষা : এরা একই ভাষায় কথা বলেন । 

( iv ) রক্ত সম্বন্ধতা :  উপজাতিরা প্রত্যেকেই মনে করেন যে , পরস্পরের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে ও তাঁরা একই বংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন ।

( v ) অন্তঃবিবাহ :  প্রত্যেক উপজাতিই সাধারণত নিজস্ব উপজাতির মধ্যে বিবাহ করেন । এক উপজাতি অন্য কোনও উপজাতির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চান না ।

ভূগোল ও পরিবেশ MCQ

 ( vi ) সাধারণ সংস্কৃতি :  প্রত্যেক উপজাতির মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি আছে , যার দ্বারা উপজাতি সমাজের সামাজিক কাঠামো ও কার্যক্রম রক্ষা পায় ।

 ( vii ) সাধারণ ধর্ম : এঁরা জড় উপাসক অর্থ প্রকৃতি পূজারী , যেমন গাছপালা , পাহাড় - পর্বত , জীব - জন্তু প্রভৃতির পূজো করেন ।

 ( vii ) সাধারণ নাম : এঁরা একই ধরনের নাম ব্যবহার করেন যাতে পরস্পরের নাম ভুলে যেতে কষ্ট না হয় । সাধারণ নামের মাধ্যমে পরস্পরকে মনে রাখার ও চেনার সুবিধা হয় ।

  ভারতের উপজাতির শ্রেণীবিভাগ   

 আঞ্চলিক , দৈহিক , ভাষা , পেশা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী ভারতীয় উপজাতিদের নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়— 

( 1 ) আঞ্চলিক বিভাগ : ভারতীয় উপজাতির বিস্তৃতি ও বসতির ঘনত্ব অনুযায়ী তাদেরকে ছয় ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । 

( a ) উত্তর পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী আক্কা , মিরি , সেমা নাগা , আও - নাগা , লোটা - নাগা , খাসি , গারো ইত্যাদি ।

( b ) পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশে অঞ্চলে বসবাসকারী যথাক্রমে লেপচা , ' ভূটিয়া , রাভা এবং ভোট , করওয়া , চেরী ইত্যাদি উপজাতি । 

( c ) মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের শবর , সাঁওতাল,মুণ্ডা , ওঁরাও ,লোধা , হো , বীরহর , কোল , খড়িয়া , জুয়াংখন্দ ইত্যাদি জাতি । 

( d ) দক্ষিণাঞ্চলের চেঞ্চু , কোটা , কুরাম্বা , বাদাগা , টোডা , কাদার , মুথুডান , উরালী , কানিক্কার ইত্যাজি উপজাতি । 

( e ) পশ্চিমাঞ্চলের গণ্ড , ভীল ইত্যাদি উপজাতি । 

( f )  দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দা আন্দামানী , জারওয়া , ওঙ্গে ইত্যাদি উপজাতি  । 

( 2 ) দৈহিক আকৃতিগত শ্রেণীবিভাগ  :  ভারতীয় উপজাতিদের দৈহিক আকৃতির বৈশিষ্ট্য দেখে এঁদের তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়— 

( A ) মঙ্গোলীয় শ্রেণী ( Mongoloid ) : এঁরা হিমালয় পাদদেশ অঞ্চলে বসবাস করেন । এঁদের বৈশিষ্ট্য হল চ্যাপ্টা মুখ , গণ্ডদেশ সমুচ্চ , এদের দেহ চুল কম থাকে । মাথার চুল সোজা , গায়ের রং হলুদ , চোখে মঙ্গোলীয় ভাজ ( epicanthic fold ) থাকে , উচ্চতা মাঝারি । 

মঙ্গোলীয়রা প্রধানত দুই শ্রেণীর--

 ( i ) প্যালিও মঙ্গোলীয় ( Palaeo Mongoloid ) , ( ii ) তিব্বতী মঙ্গোলীয় ( Tibeto Mongoloid ) |

 ( i ) প্যালিও মঙ্গোলীয় আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত– ( a ) মাথা চওড়া প্যালিও মঙ্গোলীয় , ( যেমন – লেপচা , টোডো , রাভা ) ও ( b ) মাথা লম্বা প্যালিও মঙ্গোলীয় ( যেমন— নাগা , খাসী ও লিম্বু ) ।

( ii ) তিব্বতী মঙ্গোলীয় ( Tibeto Mongoloid ) : চওড়া মাথা , লম্বা ও চ্যাপ্টা মুখ , মাঝারি আকৃতির নাক , দেহে ও মুখে লোম ও দাড়ি গোঁফের অভাব , চোখে মঙ্গোলীয় ভাজযুক্ত । যেমন —– তিব্বত , ভুটান ও সিকিমের অধিবাসীরা ।

 ( B ) প্রোটো - অস্ট্রেলীয় জাতি ( Proto - Australoid ) : বেঁটে থেকে মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন , লম্বা মাথা , চওড়া চ্যাপ্টা নাক , নাকের গোড়া বসা , কপাল উন্নত পর্যায়ের নয় , ভূ বেশ সুস্পষ্ট , গায়ের রং বাদামী থেকে কালো , চুল ঢেউ খেলানো , যেমন— ঝাড়খণ্ডের ওঁরাও , সাঁওতাল , মুণ্ডা , বীরহর , শবর , লোধা , দক্ষিণ ভারতের চেনচু , কুরাম্বা , বাদাগা , মধ্যভারতের কোল , ভীল ইত্যাদি উপাজাতি ।

( C ) নিগ্লোবটু : নিগ্রোবটু বা নিগ্রোটো - রা ভারতের প্রথম ও প্রাচীনতম অধিবাসী বলে অনুমান করা হয় । খুব সম্ভবত আফ্রিকার নিগ্রোদের বংশধর । খুব বেঁটে , গায়ের রং কালো , মাথার ঘন কালো কোঁকড়ানো ( Wooly ) চুল , ঠোঁট মোটা ও ওল্টানো , লম্বা , গোল ও চওড়া মাথাওয়ালা দক্ষিণ ভারতের কাদার , ইরুলা , আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আন্দামানী , জারওয়া , ওঙ্গে প্রভৃতি এই শ্রেণীর আদিবাসী ।

*ভাষাভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ : ভারতের ভাষাভিত্তিক মানচিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায় , দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় অঞ্চল ও ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে বাস করেন ।( অস্ট্রো - এশিয়াটিক ভাষার মানুষ হিমালয়ের উত্তর - পূর্বাঞ্চল , নিকোবর দ্বীপ , মধ্যভারত ও পশ্চিম ভারত , তিব্বতী চীন ভাষার মানুষ হিমালয় অঞ্চলে ) বা ( ইন্দো - ইউরোপীয় ভাষার মানুষ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করেন ।

অধ্যাপক তারকচন্দ্র দাস ( 1957 ) সালে উপজাতির যে শ্রেণীবিভাগ করেন তা নিম্নরূপ : 

( a ) ভীরু , লাজুক , ভবঘুরে খাদ্য অন্বেষণকারী এবং পশুপালক যাঁরা পাহাড়ের জঙ্গলে বাস করেন এবং সমতলভূমির অধিবাসীর সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে চান । বাঁচবার জন্য প্রয়োজনে অত্যন্ত কষ্ট করেন । অতি প্রাচীন ধরনের শিল্প কাজ করেন । যেমন রাঁচীর বীরহড় , কেওনঝাড়ের জুয়াং , পাল - লাহারা , ধলভূমের বুনো খেড়িয়া এবং উড়িষ্যার পাহাড়ি ভুঁইয়া ।

 ( b ) স্বাস্থ্যবান , বলবান , আশাবাদী এবং পাহাড়ি ঢালে স্থানান্তর প্রথায় কৃষিজীবী — যাদের নিজস্ব পরিশ্রমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে । যেমন সব নাগা উপজাতি ( আও , আঙ্গামী , রেঙ্গা ) , কুকী , গারো ইত্যাদি ।

 ( c ) উপত্যকা ও পাহাড়ের পাদদেশের লাঙ্গল চাষী — যাঁদের সঙ্গে অ - উপজাতি সম্প্রদায় বাস করে । যেমন ঝাড়খণ্ডের মুণ্ডা , ওঁরাও , হো , ইম্ফলের কাবুই নাগা , মধ্যপ্রদেশের গণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল ।

 ( d ) হিন্দুভাবাপন্ন উপজাতি যাঁরা শহর ও কলকারখানায় যুক্ত , যেমন — মানভূমির , বাঁকুড়ার ভূমিজ , উড়িষ্যার ভুঁইয়া , পশ্চিমবঙ্গের কোড়া , লোধা ইত্যাদি ৷ 

( e ) সম্পূর্ণরূপে মিশ্রিত ( Assimilated ) উপজাতি গোষ্ঠী , যেমন— মণিপুরের মৈথী , উত্তরবঙ্গের রাজবংশী , আসামের আহম , ছত্রিশগড়ের রাজগণ্ড । সম্প্রতি অধ্যাপক বিদ্যার্থী ( 1977 সালে ) উপজাতির অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন এবং তা পাচটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন— p>( i ) জঙ্গলে শিকারী । যেমন— জারওয়া , বীরহড় , কারওয়া ইত্যাদি । 

( ii ) পাহাড়ি চাষি । যেমন —— খন্দ , গণ্ড , খাড়িয়া এবং কিছু উত্তর - পূর্ব ভারতের উপজাতি । 

( iii ) সমতলভূমির কৃষক । যেমন — সাঁওতাল , ওঁরাও , গণ্ড , ভীল ইত্যাদি ।

 ( iv ) সরল শ্রমশিল্পী ও গ্রাম্য ( Folk ) শিল্পী । যেমন – লোহার , গুডুলিয়া , লোহার , মাহালী ইত্যাদি । 

( v ) শিল্প ও শহরের মজুর । 

1956 সালে মদন এবং মজুমদার ভারতীয় উপজাতির অর্থনৈতিক জীবনকে কেন্দ্র করে যে শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন তারই ওপর ভিত্তি করে এই অর্থনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে হয়েছে । 

এইগুলি হল যথাক্রমেঃ

( i ) খাদ্যান্বেষণ ( Food gathering ) ( ii ) পশুপালন ( Pastoralism ) ( iii ) স্থানাস্তর প্রথায় চাষ ( Shifting cultivation ) ( iv ) স্থায়ী চাষ ( Settled agriculture )


পৃথিবীর গতি ও ঋতু পরিবর্তন 

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহসমূহ 



Post a Comment

0 Comments