ষোড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো

ষোড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো

( ১ ) কাশী : ষোড়শ মহাজনপদ যুগের প্রথমদিকে 

কাশী ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ রাজ্য । এর রাজধানী ছিল বারাণসী । বরুণা ও অসি নামে গঙ্গার দুই শাখানদী এই নগরটিকে বেষ্টন করে ছিল বলে এর নাম বারাণসী । অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে বারাণসী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল । ‘ জাতক’থেকে কোশল ও অঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে কাশীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানা যায় । গৌতম বুদ্ধের সময় কাশী রাজ্যের পতন ঘটে এবং কোশল তা জয় করে ।

ষোড়শ মহাজনপদ pdf ষোড়শ মহাজনপদ mcq ষোড়শ মহাজনপদ class 5 ষোড়শ মহাজনপদ mcq,  ষোড়শ মহাজনপদ মানচিত্র, ষোড়শ মহাজনপদ মনে রাখার উপায়, ষোড়শ মহাজনপদের


( ২ ) কোশল: বর্তমান উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত কোশল ছিল একটি বৃহৎ রাজ্য । এর রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী ।কাশী রাজ্যের পতনের পর কোশল আর্যাবর্তে নিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে । মগধ রাজ্যের উত্থানের পূর্ব পর্যন্ত কোশল ছিল উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তি ৷ মহাভারত - খ্যাত বিখ্যাত ইক্ষ্বাকু বংশের মহাকোশল এখানে রাজত্ব করতেন । তিনি তাঁর কন্যা কোশলদেবীর সঙ্গে মগধ - রাজ বিম্বিসারের বিবাহ দেন । কোশল - রাজ প্রসেনজিৎ বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন ।

( ৩ ) অঙ্গ : বর্তমান বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের জেলা নিয়ে অঙ্গ রাজ্য গঠিত ছিল । ‘ ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ’ নামক গ্রন্থে অঙ্গ রাজ্যের সমৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে । গঙ্গা ও চম্পা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত চম্পা নগরী ছিল এই রাজ্যের রাজধানী । বুদ্ধদেবের সময় ভারতের ছয়টি প্রধান নগরীর মধ্যে চম্পা ছিল অন্যতম ( অপর পাঁচটি নগরী হল রাজগৃহ , শ্রাবস্তী , বারাণসী , সাকেত এবং কৌশাম্বী ) । বৌদ্ধ সাহিত্যে অঙ্গ রাজ্যকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে । এই রাজ্যের সমৃদ্ধির মূলে ছিল তার সমৃদ্ধশালী অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য । চম্পা নগরী ছিল বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র এবং এর বণিকেরা গঙ্গার অববাহিকা ধরে সমুদ্রপথে সুবর্ণভূমি বা দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যের জন্য যাতায়াত করত । বলা হয় যে , চম্পার বণিকরাই দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার আন্নাম ও কোচিন - চিনে চম্পা নামে একটি হিন্দু উপনিবেশ গড়ে তোলে । উত্তর ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অঙ্গ রাজ্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মগধ । শেষ পর্যন্ত মগধ - রাজ বিম্বিসার এই রাজ্যটিকে গ্রাস করেন ।

 ( ৪ ) মগধ : বর্তমান বিহারের গয়া ও পাটনা জেলা নিয়ে মগধ রাজ্য গঠিত ছিল । গঙ্গা , শোন ও চম্পা নদী পরিবেষ্টিত মগধ রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল ' গিরিব্রজ । পরবর্তীকালে যথাক্রমে রাজগৃহ ও পাটলিপুত্রে এর রাজধানী স্থানান্তরিত হয় । এই রাজ্যের ভূমি ছিল খুব উর্বর এবং জনগণ সাহসী ও পরিশ্রমী । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বুদ্ধদেবের সমসাময়িক হর্যঙ্ক - বংশীয় রাজা বিম্বিসার মগধের সিংহাসনে বসেন । তাঁর আমল থেকেইমগধ শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত মগধকে কেন্দ্র করে সর্বপ্রথম এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে ।

( ৫ ) বৃজি : গঙ্গা নদীর উত্তর ভাগ থেকে নেপাল পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ - ভাগ নিয়ে বৃদ্ধি বা বজ্জি প্রজাতন্ত্র গঠিত ছিল । রিস ডেভিডস্ ( Rys Davids ) ও কানিংহাম ষোড়শ মহাজনপদ Spy R কম্বোজ আরব সাগর : গান্ধার : তক্ষশিলা । চন্দ্রভাগা নং ইরাবতী নং শতন্ত্র নং বিপাশা নং সরস্বতী নং দিল্লি ) মৎস্য অবত্তী উজ্জয়িনী শূরসেন তাপ্তি নং সন্ধু নদ অ স্ম ক গোদাবরী নং যমুনা ন নর্মদা নং কোশল , বৎস শ্রোবস্তী , ধা বৈশালী কৌশাম্বী বারাণসী রাজগৃহ মগধ চম্পা । মহানদী নং sata কলিকাতা , বঙ্গোপসাগর ( Cunningham ) - এর মতে আটটি উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ যৌথভাবে এই প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিল । এর মধ্যে শাক্য , লিচ্ছবি , জ্ঞাতৃক , বিদেহ ও বৃজি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য । বৃজির অন্তর্গত শাক্য - বংশে ভগবান বুদ্ধদেব এবং জ্ঞাতৃক - কুলে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন । বৈশালী ( বর্তমান মজঃফরপুর জেলা ) ছিল এই রাজ্যের রাজধানী । বৈশালী ছিল সমকালীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগর । বিভিন্ন বৌদ্ধগ্রন্থে বৈশালীর সমৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে ।

( ৬ ) মল্ল বা মালব : বৃজি রাজ্যের উত্তরে , সম্ভবত উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় মল্ল রাজ্য অবস্থিত ছিল । বৃজি রাজ্যের মতো এটিও ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাজ্য । এইরাজ্যটি দুই অংশে বিভক্ত ছিল এবং তাদের রাজধানী ছিল কুশীনগর ও পাবা । রাজ্যটির দুই অংশেই বুদ্ধদেবের প্রচুর শিষ্য ছিল । বুদ্ধদেব কুশীনগরে দেহরক্ষা করেন ।

 ( ৭ ) চেদি:  চেদি হল মহাভারত এবং তারও আগের প্রাচীন রাজ্য । যমুনা নদীর কাছে বর্তমান বুন্দেলখণ্ড ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে এই রাজ্যটি গঠিত ছিল । এর রাজধানী ছিল শুক্‌তিমতী ( বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বান্দা ) । কাশী রাজ্যের সঙ্গে চেদিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ।

 ( ৮ ) বৎস বা বংশ : বর্তমান উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার দক্ষিণ তীরে বৎস রাজ্যটি অবস্থিত । এর রাজধানী ছিল প্রাচীন কৌশাম্বী নগরী ( বর্তমান কোশাম ) । এই রাজ্যটি কৃষিতে খুব উন্নত ছিল । তুলা এবং তুলাজাত বস্ত্র উৎপাদন ছিল এই রাজ্যের প্রধান শিল্প । বৎস - রাজ উদয়ন প্রাচীন ভারতের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন । মহাকবি ভাস এর ‘ স্বপ্নবাসবদত্তা ' এবং শ্রীহর্যের ‘ রত্নাবলী ’ ও ‘ প্রিয়দর্শিকা ’ — এই তিনটি নাটকের নায়ক হলেন উদয়ন । ইনি গৌতম বুদ্ধ , মগধ - রাজ বিম্বিসার ও অজাতশত্রুর সমসাময়িক ছিলেন । ‘ কথাসরিৎসাগর ' - এ তাঁর দিগ্বিজয়ের বর্ণনা আছে । 

( ৯ ) কুরু : দিল্লি ও তার সন্নিহিত অঞ্চল নিয়ে কুরু রাজ্য গঠিত ছিল । কুরু রাজ্যের রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ । মহাভারতের যুগেও এর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ । হস্তিনাপুর ছিল এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান নগর । পালি গ্রন্থ অনুসারে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যুধিষ্ঠিরের বংশধররা এখানে রাজত্ব করতেন — এ সম্পর্কে অবশ্য মতপার্থক্য আছে । যাই হোক , এই রাজ্যটি ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে রাজ্যটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে ।

( ১০ ) পাঞ্চাল:  কুরু রাজ্যের প্রতিবেশী পাঞ্চাল রাজ্যটিও মহাভারতের যুগে বিখ্যাত ছিল । বর্তমান রোহিলখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা - যমুনা দোয়াবের কিছু অংশ নিয়ে এই রাজ্যটি গঠিত ছিল । জাতক , মহাভারত ও দিব্যবদান থেকে জানা যায় যে , গঙ্গা নদী এই রাজ্যটিকে উত্তর পাঞ্চাল ও দক্ষিণ পাঞ্চাল নামে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে । উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র এবং দক্ষিণ পাঞ্চালের রাজধানী ছিল কাম্পিল্য । বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায় যে , উত্তর পাঞ্চালের অধিকার নিয়ে প্রাচীন যুগে কুরু ও পাঞ্চাল রাজের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে ।

( ১১ ) মৎস্য : বর্তমান রাজপুতানার জয়পুর , ভরতপুর ও আলোয়ার নিয়ে মৎস্য রাজ্য গঠিত ছিল । মহাভারতের খ্যাতিমান বিরাট রাজা এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । তাঁর নাম অনুসারে এই রাজ্যের রাজধানীর নাম হয় বিরাটনগর ( বর্তমানের বৈরাট ) । মহাভারতে এই রাজ্যের সমৃদ্ধির উল্লেখ আছে ।

 ( ১২ ) শূরসেন : পাঞ্চালের পাশে যমুনা নদীর তীরে শূরসেন রাজ্য অবস্থিত ছিল । এর রাজধানী ছিল মথুরা । মহাভারত ও পুরাণ অনুসারে যদু বা যাদব - বংশীয় রাজারা এখানে রাজত্ব করত । 

( ১৩ ) অস্মক ঃ দক্ষিণ ভারতে গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত অস্মক রাজ্যের রাজধানী ছিল পোটালি , পোটান বা পোদান । মহাভারতের বর্ণনা অনুসারে অস্মক নামে জনৈকরাজর্ষি পোদান নগরীর পত্তন করেন । বায়ুপুরাণে অস্মকের রাজাদের ইক্ষ্বাকু - বংশীয় বলে বর্ণনা করা হয়েছে ।

( ১৪ ) অবন্তী :  মালব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ নিয়ে অবন্তী রাজ্য গঠিত ছিল । সম্ভবত বেত্রবতী নদী এই রাজ্যকে উত্তর ও দক্ষিণ — এই দু'ভাগে ভাগ করেছিল । উত্তরাংশের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী এবং দক্ষিণাংশের রাজধানী ছিল মহিস্মতী ( বর্তমান মাহেশ্বর ) । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গৌতম বুদ্ধের সময় এর অধিপতি ছিলেন প্রদ্যোৎ । তাঁকে ‘ চণ্ড প্রদ্যোৎ ’ বলা হত । তিনি আর্যাবর্তে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন । শেষ পর্যন্ত অবন্তী রাজ্য মগধের অন্তর্ভুক্ত হয় ।

( ১৫ ) গান্ধার : তক্ষশিলা ( বর্তমান রাওয়ালপিণ্ডি ) ও কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে সমৃদ্ধশালী গান্ধার রাজ্য গঠিত । মহাভারতে এর উল্লেখ আছে এবং ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী গান্ধারী ছিলেন এই রাজ্যের রাজকন্যা । এর রাজধানী তক্ষশিলা ছিল প্রাচীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেন্দ্র এবং বাণিজ্যস্থল । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পারসিক - রাজ গান্ধার রাজ্য জয় করেন ।

( ১৬ ) কম্বোজ : উত্তর - পশ্চিম ভারতে গান্ধার রাজ্যের কাছেই ছিল কম্বোজ রাজ্য । এর রাজধানী ছিল রাজপুর । মহাভারতে কম্বোজের উল্লেখ আছে । আর্যরা ভারতে প্রবেশের সময়ে কম্বোজে বসবাস করে । আর্য সংস্কৃতি গঙ্গা - যমুনা অঞ্চলে বিস্তৃত হলে কম্বোজের গুরুত্ব কমে যায় ।

হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

Post a Comment

0 Comments